নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩৭ জনের শরীর ৮০ থেকে শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার ১১টার পর এ তথ্য জানা যায়।
আগুনে ইমাম, মোয়াজ্জিনসহ গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই মসজিদে এসি বিস্ফোরেণর ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লার বাইতুছ সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ শেষে মোনাজাত হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মসজিদের কাছের বৈদ্যুতিক ট্রানসফর্মারে বিস্ফোরণ ঘটে।
সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতরে এসির বিস্ফোরণও ঘটে। মুহূর্তে মসজিদের ভেতরে আগুন ধরে যায়। আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়লে মুসল্লিরা দগ্ধ হতে থাকেন। দগ্ধ হন মসজিদের ইমাম মালেক আনসারী (৬৫) ও মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫), ফটো সাংবাদিক নাদিম হোসেনসহ (৪২) ৩৭ জন।
আহতদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন।
তবে স্বজনরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন।
স্থানীয় ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশের আলী জন্টু জানান, হঠাৎ বিস্ফোরণের পরপরই আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি মসজিদের ভেতরে একের পর এক লোকজন পড়ে আছে। ট্রানফর্মারের ভেতরে থাকা গরম তেল ভেতরে পড়ে অনেকে দগ্ধ হয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার পর দগ্ধ রোগীদের ১০০ শয্যা হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তার কাউকে ধরেও দেখেনি।
ফ্লোরে বসিয়ে রাখা হয়। পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল হোসেন জানান, রাত ৯টার পর একের পর এক আগুনে পোড়া রোগী আসছিলো। তাদের সবার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়নি। তাদের অনেকের শরীরের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ পুড়ে গেছে ।
তাদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন দেশ রূপান্তরকে জানান, সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুছ সালাত জামে মসজিদে রাত পৌনে ৯টার দিকে হঠাৎ করে এসিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
এ সময় প্রায় ৪০ জনের শরীর পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ করছে।
রাত ১১ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যেকের অবস্থাই আশংকাজনক। প্রত্যেকের শরীরের ৮০ থেকে শতভাগ দগ্ধ হয়েছে।
ফায়ার বিগ্রেডের উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, দেড় টনের ছয়টি এসি ছিল। সব একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে।
এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্থিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি।
এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা কামরুল আহসান জানান।
আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডাক্তার সামন্ত লাল সেন জানান, এখন পর্যন্ত ৩৭ দগ্ধ রোগী ইনস্টিটিউটে এসেছেন।
তাদের অধিকাংশের শরীর মারাত্মকভাবে দগ্ধ রয়েছে।